ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
দেশজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বিএনপি চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ উত্তরা বিআরটিএ অফিসে প্রকাশ্যে চলছে ঘুষ দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি প্রকল্পের টাকায় চলছে মেট্রোরেল পঞ্চগড়ের বোদায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত শ্রীপুর পৌর বিএনপির আয়োজনে বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি অনুষ্ঠিত ভাণ্ডারিয়ায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা বরগুনায় বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় ১২ জন আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর নোবিপ্রবি শব্দকুটির আয়োজিত নজরুল প্রয়াণ দিবস পালিত পঞ্চগড়ের আলোচিত রফিকুল হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি গ্রেফতার চিলমারী দীঘলকান্দি আশ্রয়ণের মালামাল লুটপাট পোরশায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালিও পরিছন্নতা অভিযান জনসম্পৃক্তহীন যারা তারাই পিআর পদ্ধতি চায় : এলডিপি মহাসচিব বেগমগঞ্জে বালিকা মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি কলাপাড়ায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ মীরসরাইয়ে বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা অংশে ১০৪ কিমি. সড়কে মৃত্যুফাঁদ পাইকগাছায় শ্রীকণ্ঠপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আদমদীঘিতে ন্যায্যমূল্যে ওএমএসের আটা বিক্রি উদ্বোধন

ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বিএনপি

  • আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩৫:৫২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১২:৩৫:৫২ পূর্বাহ্ন
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বিএনপি
* আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জটিল ও বহুমুখী পরিস্থিতি
* ভূ-রাজনীতিতে দেশি-বিদেশি নানা শক্তি চেষ্টা করছে হস্তক্ষেপের
* ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টায় লিপ্ত
* নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে একতাবন্ধ বিএনপির তৃণমূল


আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত ও দেশীয় এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ মোকাবেলা করে এগিয়ে চললেও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিএনপি। একদিকে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রে দলের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ ছিল তৃণমূলে। অন্যদিকে ভারতীয় ষড়যন্ত্রে বার বার দুর্বল করা হয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারণী পরিষদকে। যদিও ৫ আগস্টের পরে নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছে বিএনপির তৃণমূল এবং একতাবদ্ব হয়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিতিশীলতায় পড়তে হচ্ছে বিএনপিকে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক জটিল ও বহুমুখী পরিস্থিতি। গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার জন্য দেশি-বিদেশি নানা শক্তি নানা কৌশলে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তির কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তন রোধ করাই দলের মূল লক্ষ্য বলে জানাচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছাবার্তায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জানিয়েছেন, বিএনপি বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জনগণের অধিকার আদায়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বর্তমানে বিএনপির মূল লক্ষ্য।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি দেশে দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনকেই একমাত্র পথ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে একই সময় দেশি-বিদেশি নানা চক্র আসন্ন নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কৌশল ও তৎপরতায় জড়িয়ে আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ও ভারতের কৌশলগত স্বার্থ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ভারতের একটি প্রভাবশালী অংশ আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বলে বিশ্লেষকদের মত।
তাদের মতে, ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সরকারের চরিত্র ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তাই শেখ হাসিনা সরকারের পতন ভারতের কাছে উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে। তবে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের বদলে ভারত কূটনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লি ও কলকাতায় খোলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং ভারতের মাটিতে বসে সেখান থেকে পরিচালিত আওয়ামী লীগের ‘বাংলাদেশবিরোধী’ কার্যক্রম বন্ধে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে। এর জবাবে ভারত সরকার জানায়, তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নয় এবং ভারতের মাটি অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে দেবে না।
তবে ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা মণি শংকর আইয়ার সে দেশের এক গণমাধ্যমকে বলেছেন, শেখ হাসিনার যতদিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে দেওয়া উচিত। সেটা জীবনের শেষদিন পর্যন্তও হতে পারে। তাকে থাকতে দেওয়া উচিত, যা রাজনৈতিক মহলে ভারতের পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বকীয়তাকে উপেক্ষা করে কোনো পক্ষকে জোরপূর্বক ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা খুবই নোংরা হস্তক্ষেপ। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন ও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী দাবি করছে এবং দেশ-বিদেশে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারা প্রোপাগাণ্ডা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জনমত প্রভাবিত করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত ও দেশে অরাজকতা তৈরি করে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরাতে পরিকল্পনা করেছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে তিনি পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ২৫০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করেন এবং আরও দুই হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
তাদের ধারণা, একবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তাই তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই দেশে বড় ধরনের অরাজকতা, মব ভায়োলেন্স এবং সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সংকট তৈরি করতে চাইছে। এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন স্থানে জনমনে ভয়ভীতি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে। গত ৩১ আগস্ট ধানমন্ডিতে তাদের প্রকাশ্যে মিছিল করাকে এই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তারা শক্তি প্রদর্শন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অন্তর্বর্তী সরকার ও বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার হামলা, প্রোপাগাণ্ডা ও বিভেদ তৈরির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ কার্যক্রম অবাধ নির্বাচন এড়ানো ও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কৌশল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগের এই তৎপরতার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এড়ানো, কারণ তারা জানে যে, এমন নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে তারা নিজেদের ‘নির্যাতিত’ হিসেবে উপস্থাপন করে সহানুভূতি অর্জন করতে পারে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ সুগম হয়। এই কৌশলকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচন ঠেকানোর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বিএনপি সতর্ক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হলেও, এখনও পর্যন্ত তারা সরকারের প্রতি সমর্থন জারি রেখেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি কৌশলী পদক্ষেপ, যাতে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। এ ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বিএনপি নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচন চাইছে এবং মনে করছে, নির্বাচন হলে দেশের অবস্থা ভালোর দিকে যাবে, তাই তাদের দায়িত্ব হলো ধীরস্থিরভাবে কাজ করা, যাতে নির্বাচন বানচাল না হয়। এজন্য অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি। বড় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব বেশি।
এদিকে দেশের অরাজকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার, কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দেওয়ার এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিএনপি মনে করে, সহিংসতা বা অরাজকতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরাগমন সহজ করবে। তাই তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক চাপ বজায় রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্যানুসারে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আড়ালে বিভিন্ন দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির একটি হিসাব-নিকাশ চলছে। তারা মনে করছেন, এটি একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপি প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করা সম্ভব, যা ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তন রোধ করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, জোটের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করা এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করাও সম্ভব হবে। তবে, এই ধরনের জোট গঠন প্রক্রিয়া সহজ নয়। প্রতিটি দলের নিজস্ব এজেন্ডা ও দাবি-দাওয়া থাকে এবং গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক অবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে নানা কারণে। ইতোমধ্যেই বিএনপি জানিয়েছে, তাদের এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে পুনরায় জোট গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার চেষ্টা রোধ করা। তারা চান না, জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার কারণে আবারও জনগণের রোষানলে পড়তে হোক।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে নানা মহলের অপতৎপরতার কারণে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে মেরামত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা চাইছে সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ করা, কারণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিচ্ছিন্ন কোনো দলই ফ্যাসিবাদী শক্তির মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়। একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মই জনগণের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত করতে পারে এবং সফল গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মত কৌশল নির্ধারণে চেষ্টা চালাচ্ছে।
ফলে, বিএনপির এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখা এবং দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, তারা বিভিন্ন দলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ জোট গঠনের লক্ষ্য রাখছে, যা ভবিষ্যতের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশকে সুসংহত করতে সহায়ক হবে।
বিএনপি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রথমত, বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ এবং একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করছে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা, যা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করছে। তৃতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মতো দলগুলোর নির্বাচন পেছানোর প্রচেষ্টা, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের মধ্যে ঐক্যকে দুর্বল করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপিকে সুচিন্তিত ও কৌশলী পথ অবলম্বন করতে হবে। একদিকে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বজায় রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে ঐক্য ধরে রাখবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা তুলে ধরতে হবে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাচন ঠেকানোর জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে, তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে, বড় দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, বিএনপির সফলতার ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ। তাদের কৌশলী পদক্ষেপ, জনগণের সমর্থন এবং সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যই পারে এই কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে দেশকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে। এই প্রক্রিয়ায়, জনগণের সচেতনতা, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ সমর্থনও অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তাপ বিরাজ করছে, তা যেন সেই ‘তালগাছের আড়াই হাত’ প্রবাদটিকেই মনে করিয়ে দেয়। (তালগাছের একদম ওপরের দিকে ডগায় পৌঁছানোর জন্য শেষ যে আড়াই হাত অংশ উঠতে হয়, তা সবচেয়ে কষ্টকর। কারণ এই অংশে ডগা থাকে এবং সেখানে পা রাখা বা ধরে থাকা বেশ কঠিন)। অর্থাৎ যে কোনো দীর্ঘ বা কঠিন কাজ শেষ হওয়ার ঠিক আগে সবচেয়ে বেশি যে চ্যালেঞ্জিং অবস্থা থাকে, তখানই সাধারণত এই প্রবাদ উচ্চারণ করা হয়। দৃশ্যত, একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনরায়ের পাল্লা বিএনপির দিকেই ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। পর্যবেক্ষক মহলও এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরছে। কিন্তু ক্ষমতার এই সিংহ দুয়ারে পৌঁছানোর পথ ততটা সুগম নয়, যতটা সহজবোধ্য মনে হচ্ছে। এই ‘আড়াই হাত’ দূরত্বেই লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ, অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা এবং বিচক্ষণতার চরম পরীক্ষা। কেবল জনসমর্থনই নয়, কৌশলগত জোট, মাঠের নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন-এই সবকিছুই মিলেমিশে এক জটিল সমীকরণ তৈরি করবে, যা পার হওয়া বিএনপির জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
দেশজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

দেশজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব